একটি গল্প দিয়ে শুরু করা যাক,
২০২২ সালের এক সন্ধ্যায় ইউটিউবার নুসরাত জাহান তার চ্যানেল চেক করতে গিয়ে হতবাক। একটি ভাইরাল ভিডিও, যেটি তৈরি করতে তার লেগেছিল ৩০ ঘণ্টার গবেষণা ও সম্পাদনা, সেটি অন্য একটি চ্যানেলে ‘কাট-পেস্ট’ হয়ে ভিউয়ার সংগ্রহ করছে লক্ষাধিক ভিউ। নুসরাতের অভিযোগের পরও প্ল্যাটফর্মটি দ্রুত ব্যবস্থা নেয়নি। এই ঘটনা শুধু নুসরাতের নয়—বাংলাদেশের হাজারো ডিজিটাল ক্রিয়েটরের প্রতিদিনের যুদ্ধ। কিন্তু এই যুদ্ধের হাতিয়ার কী? উত্তর হলো: কপিরাইট আইন।
ডিজিটাল যুগে কপিরাইট: অস্তিত্বের লড়াই
সোশ্যাল মিডিয়ার দাপটে কনটেন্ট ক্রিয়েশন এখন শিল্প। কিন্তু এই শিল্পের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো ‘কনটেন্ট চোরাই’। আপনার ইউটিউব ভিডিও, ফেসবুক পেজের ডিজাইন, ব্লগের আর্টিকেল, এমনকি টিকটক আইডির ইউনিক কনসেপ্টও অন্যের হাতে পাচার হতে পারে মুহূর্তে। এখানেই কপিরাইট আইন হয়ে ওঠে আপনার ডিজিটাল সন্তানের গার্ডিয়ান।
কপিরাইট কী? কেন এটি আপনার জন্য প্রোয়জন?
কপিরাইট হলো আপনার মৌলিক সৃষ্টির আইনি ঢাল। এটি আপনাকে দেয়:
- একচেটিয়া অধিকার: আপনার কাজ কেউ কপি, বিক্রি বা রিমিক্স করতে পারবে না আপনার অনুমতি ছাড়া।
- আর্থিক সুরক্ষা: কনটেন্ট চুরি হলে আদালতে ক্ষতিপূরণ দাবি করার আইনী অধিকার।
- স্বীকৃতি: আপনার মেধাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রমাণিত করা।
চমকে দেওয়ার মতো তথ্য: বাংলাদেশে শুধু বই বা গানই নয়, ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল, এমনকি টিকটক আইডিও কপিরাইট নিবন্ধনযোগ্য! আইন অনুযায়ী, এসব ডিজিটাল সম্পদ আপনার ‘মেধাস্বত্ব’ হিসেবে স্বীকৃত।
কপিরাইট নিবন্ধন: যেভাবে নিজেকে সুরক্ষিত করবেন
১. ডকুমেন্ট প্রস্তুতি:
- সোশ্যাল মিডিয়া পেজের স্ক্রিনশট (রঙিন প্রিন্টে স্বাক্ষরিত)।
- জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- প্রতিষ্ঠান হলে ট্রেড লাইসেন্স বা মেমোরেন্ডাম।
২. আবেদন প্রক্রিয়া:
- কপিরাইট অফিসের ওয়েবসাইট থেকে ফর্ম ডাউনলোড করুন।
- ই-ট্রেজারি মাধ্যমে ফি জমা দিন (কাজের ধরনভেদে ২,০০০-৫,০০০ টাকা)।
- আইনজীবীর মাধ্যমে জমা দিলে ওকালতনামা সংযুক্ত করুন।
৩. মেয়াদ: ডিজিটাল কনটেন্টের কপিরাইট থাকে ৬০ বছর! অর্থাৎ, আপনার ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিও আজীবন সুরক্ষিত।
চুরি হলে কী করবেন? আইনী প্রতিকারের স্টেপ বাই স্টেপ
- ধাপ ১: কপিরাইট সার্টিফিকেটসহ নোটিস পাঠান চোরাইকারীকে।
- ধাপ ২: সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করুন (ফৌজদারি ক্ষেত্রে ৫ বছর কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা)।
- ধাপ ৩: প্ল্যাটফর্মে DMCA ক্লেইম করে কনটেন্ট ডিলিট করুন।
আপনার সৃষ্টিই আপনার পরিচয়
ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন তখনই পূর্ণ হবে, যখন প্রতিটি ক্রিয়েটর তার মেধার মূল্য পাবে। কপিরাইট নিবন্ধন শুধু আইনী প্রক্রিয়া নয়—এটি আপনার সৃজনশীলতার প্রতি সম্মান। তাই আজই নিবন্ধন করুন, নিজের ডিজিটাল স্বপ্নকে দিন কংক্রিটের সুরক্ষা।
সূত্র: বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট ২০২৩